গারোদের আদি ধর্ম সাংসারিক। ওই ধর্মে বিয়ের নিয়মটা আলাদা। এখনো যারা সাংসারিক ধর্মে আছেন, তাদের বিয়ে পড়ানো হয় আদি নিয়মেই।

গারো সমাজে একটি লোককাহিনী প্রচলিত আছে। ওই কাহিনীতে আছে দু’টি চরিত্র। একটি সেরেনজিং। অন্যটি ওয়ালজান। এরা দুইজন খালাতো ভাই-বোন। তবে এদের মধ্যে তৈরি হয় প্রেম।

সেরেনজিং ও ওয়ালজানের প্রেমের গল্পকে অবলম্বন করে ভিডিওচিত্র নির্মাণ করেছে ভ্রমণবিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল ট্রাভেলাইফ। কয়েকটি পর্বে ভাগ করা তথ্যগল্পের একটি পর্বে দেখানো হয়েছে গারোদের বিয়ের আদি নিয়ম।

এতে আছে গারো মেয়ে সেরেনজিংয়ের বিয়ের আসর।

তথ্যগল্পগুলো পরিচালনা করেছেন মশিউর রহমান কায়েস। প্রযোজনা করেছেন আহসান সজিব। আর সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন আনন্দ সরকার।

এতে সেরেনজিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফাংশ্রী (ফাতেমা) রংদী। ওয়ালজান চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুরন্ত মান্দা। নোরেং মাসি চরিত্রে প্রতিভা রংদী।

তথ্যগল্পে দেখা যায়, সেরেনজিংয়ের বিয়ে হয় সাংসারিক ধর্মমতে।

নোরেং মাসির বাড়িতে পুরোহিত এসেছেন। সেরেনজিং আর থোরার বিয়েতে উপস্থিত হয়েছে আত্মীয় ও পাড়ার লোকেরা। বিয়ের মতো পবিত্র কাজের নিয়ম রক্ষার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে জীবিত মোরগ। এই মোরগ কেটে নতুন দম্পতির মঙ্গল কামনা করা হয়। আর বিয়ে উদযাপনের জন্য বানিয়ে রাখা হয়েছে গারোদের পবিত্র মদ ‘চু’। মদ হলেও এই পানীয় গারোদের কাছে কতোটা পবিত্র, এ নিয়ে প্রকাশ হবে ট্রাভেলাইফ এর আলাদা একটি প্রতিবেদন।

বিয়ের মন্ত্র পড়লেন পুরোহিত। হাতে তুলে নিলেন জীবিত মোরগ। আসর মাত করে মোরগ কক্-কক্ করছে। পুরোহিত আবারো মন্ত্র পড়লেন। মোরগ হাতে নিয়ে কনের পিঠে চাপড় দিলেন। চাপড় দিলেন বরের পিঠেও। এবার বর ও কনের মঙ্গল কামনায় মোরগ উৎসর্গ করা হবে।

পুরোহিতের জন্য দা এনে রেখেছিলেন নোরেং মাসি। পুরোহিত দা হাতে নিলেন। মাটিতে রাখলেন। নিজের হাতে মোরগের গলা কাটলেন। পেট কেটে পরীরক্ষা করলেন। তারপর সমবেতদের সামনে জানিয়ে দিলেন, সেরেনজিং আর থোরার বিয়ে টিকবে না। ওদের কপালে ভাঙন আছে।

তবুও পুরোহিত মন্ত্র পড়লেন। সাংসারিক নিয়ম মেনে থোরার সঙ্গে সেরেনজিংয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন।

গারো লোককাহিনী অবলম্বন করে তথ্যগল্পটি রচনা করেছেন শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ।